চিলাহাটি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ চিলাহাটি বাসীর কাছে আজ এক অপরিহার্য নাম । যতদুর জানা যায়, অবিভক্ত ভারতের এই এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। জ্ঞানার্জনের জন্য চিলাহাটি বাজারের অদুরে কারেঙ্গাতলী ও গোমনাতীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দারস্থ হতে হতো। জ্ঞানার্জনের পথ সুগম করার জন্য আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর পুর্বে ১৯৪২ সালে অত্র এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের উদ্যোগে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় চিলাহাটি মার্চেন্টস বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে ১৯৪২ খ্রিঃ এর জমিদাতা ছিলেন মরহুম মনির উদ্দীন চৌধুরী ও মরহুম আজিজার রহমান চৌধুরী । মরহুম করিম উদ্দীন প্রামানিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে উক্ত জমিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৪২ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত পরিচালনার পর চিলাহাটির বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ১৯৫৪ সালের রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো অনুযায়ী উক্ত বিদ্যালয়টিকে একটি জুনিয়র হাইস্কুলে উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তদানুসারে কার্যক্রম শুরু হয় এবং ডিডিপিআই রাজশাহীর অনুমোদনক্রমে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত খোলা হয় । এভাবে বিদ্যালয়টি চলতে থাকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত । তারপর ঐ সালেই সমাজে শিক্ষার পথ সুগম করার প্রয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে তৎকালীন সরকারের অনুমোদনক্রমে ১৯৫৯ সালে নবম শ্রেণি এবং ১৯৬০ সালে দশম শ্রেণির পাঠদান শুরু হয়। দীর্ঘ এক দশক পর জনসংখ্যার ঘনত্ব ও নারী শিক্ষার গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে উক্ত জমি ও ভবনের উপর ১৯৬৯ সালে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি চিলাহাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে স্বতন্ত্র একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে চিলাহাটি মার্চেন্টস উচ্চ বিদ্যালয়কে অন্যত্র স্থাপন করেন। ১৯৭২ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ২৬ জন পরীক্ষার্থী, পাশ করে ২২ জন। শিক্ষক সংখ্যা ছিল ০৮ জন। দীর্ঘ চার দশক পর বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেলে সুযোগ্য ম্যানেজিং কমিটি ও সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খোলার সিদ্ধান্ত হয় এবং কার্যক্রম শুরু হয় । অবশেষে ২০১০ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অনুমতি মিললে ২০১১ সাল থেকে ছাত্রী ভর্তি শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই কলেজে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক এই তিনটি বিভাগেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাদান ব্যবস্থা চালু আছে। ২০১৩ সালে প্রথম এইচএসসি পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মোট ৭৬ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগে ১ জন শিক্ষার্থী A+ সহ পাশ করে মোট ৬৭ জন শিক্ষার্থী।
বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১০০০ জন । শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ৪৫ জন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত ছিল বিদ্যালয়টি। অর্ধশত বছর ধরে শত প্রাণ আলোকিত করলেও শতভাগ পূরণ হয়নি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে একটি তিনতলা ভবন স্থাপন করা হলেও চাহিদা পূরণ হয়নি।